রাগ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি

আজকে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি একটি ব্যাপারে জরুরী কথা বলার জন্য প্রায়ই দেখা যায়, মানুষ রেগে একজন অন্য জনকে গালাগালি করে, বিভিন্ন ঝামেলা জড়াইয়া যায়, কোন ক্ষেত্রে হত্যা এবং আত্মহত্যার সৃস্টি করে এমন কি কঠিন কঠিন বিপর্যায়ের সুষ্টি করে। তা হলে এই ব্যাপারে অবশ্যই আমাদের জানা প্রয়োজন, কেন এমন হয়? কোরআন এই ব্যাপারে কি নির্দেশ আমাদেরকে দিয়াছেন। আমরা কতটা তা অনুসরন করি?

এবার আসা জান মানুষ যেমন হাসে, কাঁদে, তেমনি রাগ হওয়াটাও স্বাভাবিক ব্যাপার। তেমনি রেগে গেলে সে যদি তা প্রকাশ করে, তাও কিন্তু স্বাভাবিক। তবে অতিরিক্ত রাগের বহিঃপ্রকাশ একজন মানুষের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে যার প্রভাব পড়তে পারে তার পারিবারিক কাজকর্মে এবং ব্যক্তিগত জীবনে। রাগের জন্যই মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যেতে পারে। রাগ মানুষকে তার আপনজনের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দেয়। সুন্দরকে মুহূর্তের মধ্যে কুৎসিত করে তুলবার জন্য রাগ হল সবচেয়ে শক্তিশালী একটি ধারালো অস্ত্র। যাহা স্বাভাবিক মানুষ থাকে না, রাগাম্ভিত ব্যক্তিটি একটি অপরিচিত মানুষে পরিনত হয়ে যায়।

আগে আমাদের জানতে হবে রাগ কি ?
রাগ হল অতিসহজ এবং স্বাভাবিক একটি আবেগ, যা হাসি-কান্নার মতোই সত্য। বিজ্ঞান কি বলে - অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু হরমোন রাগ প্রকাশের সঙ্গে জড়িত। রাগের সময় মানুষের মাঝে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন দেখা যায়। হৃৎপিণ্ডের গতি ও রক্তচাপ বেড়ে যায়, এড্রিনালিন এবং নরএড্রিনালিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। ধর্ম কি বলে, মানুষের মধ্যে শয়তান এসে কুমন্ত্রনা দিয়ে বোধ শক্তিকে লোভ করে দেয়, ভালটাকে খারাপ ভাবতে সাহায্য করে, ভবিষৎ সম্পকে ভাবতে ভূলিয়ে দেয়, কর্মফল ভাবতে বাধা প্রধান করে।

কেন মনে রাগ বাসা বাঁধে?
ধরুন, আপনি একজন কর্মজীবী নারী, সকালে সংসারের অর্ধেক কাজ করে কারো কাছে সংসার ও বাচ্চাকে বুঝিয়ে দিয়ে অফিসে তাড়াহুড়ো করে রওনা হচ্ছেন, আপনার কাজের মহিলাটি এরই মধ্যে একটি ঝামেলা বাধাল_প্রচণ্ড রাগ হলো আপনার। রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম লেগে অফিসে সময়মতো পৌঁছানোর কোনো সম্ভাবনা নেই- রাগ! দেরিতে অফিসে পৌঁছে বসের কাছে কটু কথা শুনলেন_রাগ! সারাটা দিন নাক-মুখ ডুবিয়ে কাজ করলেন; তার পরও আপনার কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হলেন_রাগ! ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলেন, দেখলেন বাচ্চাটা সারা দিন কিছু খায়নি, বাসায় লোকজন আপনার বাচ্চাকে নিয়ে একগাদা অভিযোগ করছে আপনার কাছে_যেন সব দোষ আপনার, অথচ আপনি নিজেই তখন পরিশ্রান্ত ও ক্ষুধার্ত। নিরীহ বাচ্চা অথবা কাজের মেয়ের ওপর গিয়ে পড়ল আপনার রাগ। আপনার স্বাভাবিক ইন্দ্রিয় গুলো তখন সঠিক ভাবে কাজ করতে চায় না।, এক্ষেত্রে আপনার করনিয় কি, ধর্য্যধারন করা এবং নামাজ আদায় করা, ও স্বাভাবিক ভাবে সমস্ত সমস্যা মোকাবিলা করা, বেশী বেশী আল্লাহুর কাছে সাহায্য কামনা করা, ইসলাম এটাই সর্মথন করেন। রাগ করলে কি হতে পারে তা ভেবে কথা বলা, কারন, আপনাকে তো চাকুরী করতেই হবে, স্বামীর সংসারের সচ্চতা আনার জন্য, তাই, রাগ সংবরন করাটা ঈমানী দায়িত্ব এবং বুদ্ধিমানের কাজ এবং রাগ করাটা তো আপনার জনাই আছে, এটা শয়তানের কাজ।

তাই চলার পথে আমাদের রেগে গেলে চলবে না। কথায় আছে, “রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।” রাগকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই মানুষ রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। মানুষ ঠিক কখন রেগে যায় এর বোধহয় কোনো নির্দিষ্ট উত্তর খুঁজে পাওয়া কঠিন। হতে পারে অফিসের কোনো কাজের কারণে; বাসায় বাচ্চারা কথা না শুনলে। হাসি, কান্না, রাগ বা হিংসা এই সবই মানুষের ন্যাচারাল ইমোশন। কিন্তু রাগকে কীভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে তা মনে রাখা খুব প্রয়োজন। যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, রাগ হলে কী করেন; বেশিরভাগ উত্তর হবে চিৎকার করা, বা যা কিছু আছে সব ছুড়ে ফেলে দেওয়া, অথবা কেউ চুপ হয়ে থাকে বা কেঁদে ফেলে। কিন্তু এর কোনোটি কিন্তু সঠিক উপায় নয় রাগ প্রকাশ করার জন্য। একবার ভেবে দেখা উচিত যে এ ধরনের ব্যবহারে আমাদের আশপাশের মানুষকে কীভাবে প্রভাবিত করছে। নিজেকে এবং আশাপাশের সবাইকে ভালো রাখতে হলে দরকার নিজের ইমোশনগুলো কন্ট্রোল করে রাখা। রাগের সময় নিজের মাথা ঠাণ্ডা রাখা আর এটা কার্যকর করা। কেউ যখন রাগ করে, তিন ধরনের রেসপন্স দেখতে পাওয়া যায় মানসিক, শারীরিক এবং ব্যবহারিক। যদি মাথা গরম হয়ে যায় তা হলে তো মানসিক রেসপন্স, বুক ধরফড় করা, হাত কাঁপতে থাকা হলো শারীরিক রেসপন্স’ শরীরের বিভিন্ন গ্ল্যান্ড থেকে হরমোন নিঃসৃত হয় যা হর্ট রেট বাড়িয়ে দেয়। রেগে গেলে একেকজন মানুষণ একেকভাবে রি-অ্যাক্ট করে। কেউ কেউ যার উপর রেগে যান তাকে মার দেওয়া শুরু করেন, আবার কেউ চুপ করে অপেক্ষা করতে থাকে সঠিক সময়ের যখন যথাযথ শাস্তি দিতে পারবেন। কিছু লোক আছে, যাদের স্বভাবের সাথেই রাগ জিনিসটা খুব ছোটবেলা থেকেই আছে। কোনো তুচ্ছ ব্যাপার ঘটলেও সহজেই রেগে যায় তার, আর এদের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। এটা কিন্তু একধরনের রোগ ও বলা চলে। এর ফলে অনেক সময় সাইকোথেরাপির দরকার হতে পারে। অতিরিক্ত রেগে যাওয়া যেমন খারাপ, তেমনি মনের মধ্যে রাগ লুকিয়ে রাখাটাও যেন অস্বাভাবিক। তাই তারা সেটা প্রকাশ করেন না। কিন্তু এর ফলে অনেক সময় এটা শারীরিক এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এবং হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য জটিল রোগ দেখা দেয়। আরও দেখা যায় যে, যারা রাগ প্রকাশ করতে পারে না তারা কাউকে সামনা সামনি কোন কথা মুখ খুলে বলতে পারে না। আর পেছনে সমালোচনা করে থাকেন। এর ফলে নিজেকে একা একা মনে করতে থাকেন এবং সম্পর্ক গড়ে তুলতে কষ্ট হয়। রাগ করাটা কোনো অন্যায় নয়। মানুষ নিশ্চয়ই রাগ করবে কিন্তু তার প্রকাশ হতে হবে অন্যরকম। জীবনের সবকিছু যেমন ব্যালেন্স করে চলতে হয়, তেমনি ইমোশনগুলো প্রকাশের ক্ষেত্রেও ব্যালেন্স করে নিতে হবে। বলতে পারেন, জীবনে এতো কিছু মেনে চলতে গেলে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাই তো কষ্টকর হয়ে যাবে, আমরা প্রতিদিন যেভাবে খাওয়া-দাওয়া, সাজপোশাক, জীবনযাপনের ধারা মেনে চলি তেমনি আমাদের ইমোশনগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হয়তো সবকিছু একদিনে সম্ভব হবে না। কিন্তু একবার শুরু করে তো দেখা যাক। এইভাবে দেখবেন যে, আপনি অবশ্যই সাফল্য অর্জন করবেন। রাগ এবং অসুখ কিছু অসুখের কারণেও মাথা গরম হয়ে যায় বেশ তাড়াতাড়ি। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। যেমন, এপিলেন্সি, ব্রেন ইনজুরি, লেড পয়জনিং, মানসিক অস্থিরতা। কিছু মানসিক অসুখের কারণেও অনেক সময় অতিরিক্ত রাগ হতে পারে, যেমনঃ-

বর্ডার লাই পার্সোনালিটি ডিস অর্ডার, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার, ডিপ্রেশন।
কিছু সহজ কৌশল

১।  প্রথমে যেটা করা প্রয়োজন তা হলো, খুঁজে বের করতে হবে সবগুলো জিনিস যা দেখতে বা কেউ করলে অথবা সেখানে গেলে আপনার মাথা গরম হয়ে যেতে পারে। এসব জায়গায় যদি দেখেন মাথা গরম হওয়ার মতো কোনো কিছু হচ্ছে, ভালো হয় ওখান থেকে চলে যাওয়া এবং আলোচনা করে সেই সমস্যার সমাধান করা।

২।  যখন মাথা গরম হয়, তখন কেমন লাগে তা একটি ডায়েরিতে লিখে রাখুন। কারণগুলো লিখে রাখুন, আর সাথে রিঅ্যাকশনগুলো। মাথা ঠাণ্ডা হলে এটি নিয়ে একটু ভাবুন এবং চেষ্টা করুন সঠিক উত্তরটি খুঁজে বের করতে।

৩।  রাগ হলে মানুষ যা ইচ্ছে তাই বলে ফেলে। সব কথা বলার আগে অবশ্যই ভেবে দেখুন, যা বলতে যাচ্ছেন সঠিক বলছেন তো? বুঝে, যুক্তি দিয়ে কথা বলাটাই কিন্তু একজন মানুষের কাজ। যখন রাগ করেন, যদি পারেন কোনো মজার লেখা, এসএমএস বা গল্প পড়তে বসে যান। দেখবেন এটা অবশ্যই কাজ করবে।

৪।  এ ছাড়া রাগ হলে যদি এক্সারসাইজ করে থাকেন, তাও অনেক উপকারে আসে। মেডিটেশনও মনকে অনেক প্রশান্তি দিতে পারে। এই দুই মিলে আপনাকে করে তুলতে পারে প্রাণবন্ত। আর দিতে পারে রাগ থেকে মুক্তি।

৫। যখন রাগ হবে, তখন পজিটিভ কথা ভাবুন। হতেই পারে তা আপনার ছোটবেলার কথা। যে সময়গুলো আপনি খুবই উপভোগ করেছেন। আর সেগুলো আপনার কাছে খুবই স্পেশাল।

৬।  আবার আপনার খুব কাছের বন্ধুকেও ফোন করে কথা বলে নিতে পারেন। তবে আপনার সঙ্গীর কি হয়েছে আর আপনি কেনো রেগে আছেন। তার থেকে পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করাই ভালো।

৭।  নিজের অ্যাটিচিউড বদলানোর চেষ্টা করুন। এমন যদি দেখেন যে সবার সঙ্গে আপনার ঝামেলা হচ্ছে। কারও কোনো কথাই আপনি মেনে নিতে পারছেন না, তাহলে বুঝতে হবে আপনারই কোথাও ভুল হচ্ছে সে ক্ষেত্রে প্রথমেই নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো দরকার।

৮।  রাগ চেপে রাখেন যারা, তাদের জন্য প্রানিক হিলিং খুবই উপকারী। এই পদ্ধতি মনের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ ভুলে যেতে সাহায্য করে।

৯। সত্যি বলতে কোন ঔষধ নেই যা রাগ কমাতে পারে। রাগ কমানোর কৌশল ছাড়া আর কিছুই নেই একে দমানোর। যে যত রেগে থাকেন তার কাজের ভুল এবং দক্ষতা ততই কম হয়। যে যত রাগ নিয়ন্ত্রন করতে পারেন তার দক্ষতা ততই বৃদ্ধি পায়।

আরো কিছু রাগ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক-

ক।  প্রথম কথা, মনে-প্রাণে বিশ্বাস আনুন- রাগ নিয়ন্ত্রণ ও পরিবর্তন সম্ভব।
মন থেকে এই বিশ্বাসগুলো ঝেড়ে ফেলে দিন- ‘আমি আমার বংশের রাগ পেয়েছি, ‘আমার রাগ স্বয়ংক্রিয়।’ ‘কিছু বোঝা বা শোনার আগেই যা ঘটার ঘটিয়ে ফেলি।’ ‘দুনিয়াটা শক্তের ভক্ত নরমের যম, মাইরের ওপর ওষুধ নাই’ ইত্যাদি।

খ্।  রাগের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে ভাবুন। ঘন ঘন রাগ অথবা তীব্র রাগ শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, মাথা ধরা হয় ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। এগুলো তো গেল শারীরিক নেতিবাচক দিক। সামাজিক ও মানসিক নেতিবাচক দিকগুলো আরো ভয়াবহ। যেমন- রাগী মানুষ আইনগত জটিলতা, মামলা হওয়া, পুলিশে ধরে নিয়ে যাওয়া, প্রিয়জনদের সঙ্গে সম্পর্ক হারানো, মাদকনির্ভরতা ইত্যাদি হতে পারে। তারা ন্যায্য কথা বললে তা মানুষের কাছে মূল্যায়ন পায় না। কেবল তার রাগটিই সবার কাছে বড় হয়ে যায়। তার প্রতি মানুষের কোনো ভালোবাসা বা শ্রদ্ধাবোধ তো থাকেই না, বরং ঘৃণা, বিরক্তি, রাগ ও ভয় থাকে। সর্বোপরি একজন রাগী ব্যক্তি ভীষণ একা হয়ে পড়ে।

গ।  আক্রমণাত্মক না হয়ে নিজের রাগের বিষয়টি প্রকাশ করাটাই রাগ নিয়ন্ত্রণের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। শান্তভাবে, ইতিবাচক উপায়ে আপনি কী নিয়ে বিরক্ত বা রাগ সেটি অপর পক্ষকে জানান, তার উত্তর যা-ই হোক না কেন। মনের মধ্যে রাগ চেপে রাখা বা পুষে রাখা স্বাস্থ্যকর নয়। বরং এতে রাগের বোঝা বড় হতে থাকবে এবং একটা সময় প্রচণ্ডভাবে বিশ্রী উপায়ে প্রকাশ পেতে পারে। অযথা রাগ না করে মাথা ঠান্ডা রাখুন। রাগের বশে মাথা গরম করে কিছু করে বসবেন না। রেগে গেলে প্রতিটা কথা বলার আগে ৫ সেকেন্ড করে সময় নিয়ে চিন্তা করুন। কারণ রেগে গেলে অনেক সময় এমন অনেক কথা বলা হয় যা অন্যের এবং নিজের জন্য ক্ষতিকারক।

ঘ।  রাগ নিয়ন্ত্রণে অনেকেই মেডিটেশন করে থাকেন। রিলাক্সেশন করেও আপনি আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। ধীরে ধীরে শ্বাস টেনে পেটের মধ্যে কয়েক সেকেন্ড (৪/৫ সেকেন্ড) ধরে রেখে ধীরে ধীরে ছাড়ার ব্যায়ামটি করুন কয়েকবার। এ ছাড়া মাংসপেশির শিথিলায়ন ও কল্পনার সাহায্যেও সুন্দর কিছু শিথিলায়ন পদ্ধতি আছে-যা রাগ নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকর। রাগের কারণটি থেকে নিজের মনকে অন্যদিকে সরিয়ে নিন। এক থেকে দশ পর্যন্ত উল্টো করে গুনতে শুরু করুন। তাহলে আপনার অজান্তেই মস্তিস্ককে কিছুটা অন্যদিকে ব্যস্ত রাখা যাবে।

ঙ।  যে পরিবেশ-পরিস্থিতি আপনার রাগের উদ্রেক করে, তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিত্যাগ করুন। কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে, মনকে শান্ত করে তবেই সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাবতে বসুন বা মোকাবিলা করুন যুক্তিযুক্ত উপায়ে। কথায় আছে- ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।’ নিজেকে নিয়ে বেশি হিসাব করতে গেলে রাগ আরও বাড়বে। তাই তাত্ক্ষণিক ব্যাপারটা মেনে নিন। সমস্যা অনেকটা কমে যাবে। কেউ রাগিয়ে দেওয়ার চেষ্ঠা করলে সঙ্গে সঙ্গে তার জবাব না দেওয়ার চেষ্ঠা করা উচিত। বেশি রাগের ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনে ঘটনাস্থল থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে চলে যান।

চ।  কিছু কিছু বিষয়কে ছেড়ে দেওয়ার মনমানসিকতা তৈরি করুন। যেমন- যাকে নিয়ে আপনি বিরক্ত, চিন্তিত বারবার বলা সত্ত্বেও আপনার কথা সে মূল্যায়ন করছে না; এ অবস্থায় আপনার রাগ চরমে উঠে যেতে পারে। তাকে নিয়ে চিন্তা করাই বাদ দিন। সাধারণত পরিবারের সদস্যরা এ ধরনের আচরণ করে থাকে। যেমন- উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে পরীক্ষার বেশি দিন নেই, কিন্তু মোবাইলে বন্ধুর সঙ্গে আলাপ, ফেসবুক, ইন্টারনেট ও টিভি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বোঝাতে গেলে বিরক্ত হয়, উল্টো চিৎকার করে ওঠে। এদের বিষয়ে কী করবেন, তা সুবিবেচক কারো সঙ্গে আলাপ করুন, তবে আপাতত নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যেসব বিষয় চিন্তা আপনার রাগের কারণ সেগুলোকে কম প্রশ্রয় দিতে চেষ্টা করুন। আপনার মন সুস্থ থাকবে ফলে আরো অন্য কোনো বিকল্প চেষ্টার কথা আপনি ভাবতে পারবেন।

ছ।  নিজের সম্পর্কে, অন্যদের সম্পর্কে ও পারিপাশ্বিকতা সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তার ধরনটা বদলে ফেলুন। এ ছাড়া চরমপন্থী চিন্তাগুলোকেও (কখনোই, একদম, সব সময়ই, অবশ্যই হতে হবে) বাদ দিন এবং চিন্তার মাঝে নমনীয়তা রাখুন। ঈমানকে মজবুদ রাখুন। ব্যক্তিগত কারনে কারো সাথে রাগ না করাটাই ভাল। একবার যদি কাউকে সঠিক কথাটা বুঝাতে ব্যর্থ হন, সময়ও সুযোগের অপেক্ষা করুন, সময় মত সময়ের ব্যবহার করতে শিক্ষতে হবে।

জ।  নিরাপদ কারো সঙ্গে দুঃখ-কষ্ট, হতাশা, সাংসারিক এবং দাম্পত্যজীবনের জটিলতা নিয়ে আলাপ করুন। যদি তিনি নির্ভরশীল ব্যক্তি হয়। নিজেকে হালকা রাখুন। রাগের মাথায় কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না; কেননা তাতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আপনি যদি মনে করেন প্রয়োজনে কারো সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিন।

ঝ।  অনেকে ধর্মচর্চার মাধ্যমে নিজের রাগের নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। নামাজের মাধ্যমে শান্তি খুঁজে পান, বিধাতার কাছে সব কিছু প্রকাশ করেন বা সব কথা জমা রেখে আশ্বস্ত বোধ করুন। যার প্রতি রাগ তাকে ক্ষমা করাও আমাদের ধর্মেরই একটি অংশ।

ঞ।  লক্ষ করুন, দায়িত্ব, সংসার, কাজ- সব কিছুর মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলছেন কি না। নিজের মনের ক্ষুধা নিবারনে কিছু করছেন কি না? শপিংয়ে যাওয়া, পছন্দমতো গানের সিডি কেনা, গান শোনা, টিভি দেখা, বন্ধু-প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্পের সময়-সুযোগ তৈরি করে নেওয়া, সব কিছু থেকে দূরে প্রকৃতির মধ্যে একটু বেরিয়ে আসা ইত্যাদি আপনার মনকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। মনের মধ্যে জমে থাকা রাগের আবর্জনা নির্মল বাতাসে ঝেড়েমুছে ফিরে আসুন আবার সংসারে।

আমরা এতোক্ষন যে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করলাম, তা আমরা অনেকেই জানি, আবার অনেকেই জানি না। তবে সবাইকে মনে রাখতে হবে, রাগ একটি ইন্দ্রিয় প্রভাব মাত্র এটাকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। তাই আসুন, সুন্দর সমাজ গঠন ও সুন্দর সংসার গঠন করি, আল্লাহু আমাদের সহায় হউন। আমিন।

Comments

Popular posts from this blog

গোলের রস ও গোলের মিঠা

কাউফল-দেশীয় ফল

কাঠবাদাম হার্ড সুস্থ্য রাখে