"ঢেউয়া" একটি গ্রাম্য অপরিচিত ফল

আজ আপনাদের সাথে এমন একটি ফলের সাথে আপনাদের পরিচয় করাইয়া দেব, যার কদর কারো কাছেই নাই। আমাদের গ্রামের আনাছে কানাছে হয়ে থাকে, পাখিরা খেয়ে বাচেঁ, কিন্তু এই ফলগুলোর আমাদের জন্য কেমন উপকারী ও তার গুনাগুন কত যে বেশী, তা চিন্তা করা সম্ভব না।




কিছুকিছু ফল আছে যেগুলোর খুব একটা পরিচিতি না থাকলেও তাদের রয়েছে অসাধারণ ভেষজ পুষ্টিগুণ। ডেউফল বা ডেউয়া হলো তাদের মধ্যে অন্যতম। অঞ্চলভেদে এই ফল মানুষের কাছে বিভিন্ন নামে পরিচিত। ঢেউয়া, ডেলোমাদার, ডেউফল, ঢেউফল ইত্যাদিও বলা হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলে এটি অত্যন্ত পরিচিত একটি ফল হলেও শহরাঞ্চলে এটি একটি অপ্রচলিত ফল। আগে গ্রামে এই ফলের চাষ হয় করা হত। তবে বর্তমানেএই ফলের চাষ খুব একটা দেখা যায় না। যে সকল যায়গা পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে, সে খানে এই ফলের চাষ করা যেতে পারে। তাতে দুই উপকার হবে। ফল ও কাঠ পাওয়া যায়।




বিশাল আকৃতির ডেউয়া গাছ চিরসবুজ বৃক্ষ। পাতাগুলো বড় এবং খসখসে, অনেকটা ডুমুরের পাতার মতো। এক একটি গাছ ২০-২৫ ফুট উঁচু হয়। এর কাঠ বেশ উন্নত মানের, বড় বড় জিনিসের কাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। গাছে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ফুল আসে এবং জুন মাসের দিকে ফল পাকতে শুরু করে।




ডেউয়া কাঁঠালের মতো গুচ্ছফল। বাইরের অংশটি থাকে অসমান। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদ হয়। ফলের কাঁঠালের মতো ছোট ছোট কোষ থাকে। পাকা ফলের কোষের রং হয় লালচে হলুদ বা লালচে কালো। এই ফল পুরোপুরি গোলাকার হয় না। ফলটির গায়ে উঁচু-নিচু হয়। কাঁচা টক টক স্বাদ। কিন্তু পাকলে সেটা তখন অন্য স্বাদ। সেটা টকও নয়, আবার মিষ্টিও নয়। এই ফলটি অনেক উপকারী। যা অনেকেরই অজানা।




বর্তমানে মেদভুঁড়ি বৃদ্ধি একটা সাধারণ সমস্যা। যার কারনে আমরা অন্যান্য অসুখ বাঁধিয়ে ফেলছি প্রতিনিয়ত। এ জন্য যারা এ সমস্যায় ভুগছেন তারা ডেউয়া ফলের রস এক থেকে দেড় চামচ ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে রোজ একবার করে এক মাস খেলে উপকার পাবেন। তবে ১২ মাস তো এ ফল পাওয়া যায় না, এ জন্য যখন পাওয়া যাবে তখন কেটে রোদে শুকিয়ে রাখতে হয়।




এছাড়া পেটে বায়ু জমলে পাকা ডেউয়ার রস দেড় চামচ আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে অল্প চিনি নিয়ে প্রতিদিন একবার এক সপ্তাহ খেলে উপকার হবে। অনেকের অসুস্থতার কারণে মুখে রুচি থাকে না, তারা উপকার পাবেন। দু-তিন চামচ ডেউয়ার রস ও সাথে একটু লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে দুপুরবেলা ভাত খাওয়ার আগে খেতে হবে। এক সপ্তাহ খেলেই মুখে রুচি আসবে।




আবার অনেকের বিভিন্ন প্রকার খাবার খেলেও পেট পরিষ্কার হয় না। অস্বস্তিতে ভোগে। তারা কাঁচা ডেউয়া কেটে ৮-১০ গ্রামের মতো বেটে গরম পানিতে মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ওই পানি খেলে পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে। যা সকালে বাসি পেটে খেতে হবে।




ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়ামের আধার বলা হয় ডেউয়া ফলকে। এগুলো ছাড়াও ডেউয়া ফলে রয়েছে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। ডেউয়া ফলের খাদ্যযোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম অংশে রয়েছে –

খনিজ- ০.৮ গ্রাম,
খাদ্যশক্তি- ৬৬ কিলোক্যালরি,
আমিষ- ০.৭ গ্রাম,
শর্করা- ১৩.৩ গ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ৫০ মিলিগ্রাম,
লৌহ- ০.৫ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন বি১- ০.০২ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন বি২- ০.১৫ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন সি- ১৩৫ মিলিগ্রাম,
পটাশিয়াম- ৩৪৮.৩৩ মিলিগ্রাম।

দেখতে অদ্ভুত এবং ভিন্ন স্বাদের ডেউয়া ফল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। পাশাপাশি এর রয়েছে বেশ কিছু ভেষজ গুণও। নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হল-

১।যকৃতের নানা অসুখ নিরাময়ে সাহায্য করে ডেউয়া।

২।কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাসের কারণে পেটব্যথা কমাতে সহায়তা করে ফলটি।

৩।পেট পরিষ্কার করতে কাঁচা ডেউয়া ৮-১০ গ্রাম বেটে নিয়ে গরম পানিতে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হবে।

৪।গাছের ছালের গুঁড়ো ত্বকের রুক্ষতা দূর করে এবং ব্রণের দুষিত পুঁজ বের করে দেয়।

৫।ডেউয়ার ভিটামিন সি ত্বক, চুল, নখ, দাঁত ও মাঢ়ির নানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

৬।এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ করে।

৭।ডেউয়াতে বিদ্যমান পটাশিয়াম রক্ত চলাচলে সহায়তা করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

এমন আরো অপরিচিত ও অচেনা ভেষজ ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল গুলো হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝ থেকে। যার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা খুব প্রয়োজন।

Comments

Popular posts from this blog

গোলের রস ও গোলের মিঠা

কাউফল-দেশীয় ফল

কাঠবাদাম হার্ড সুস্থ্য রাখে